IQNA

৯০ শতাংশ রোহিঙ্গাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

22:32 - February 27, 2018
সংবাদ: 2605142
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী তিনটি শহরের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্তত ৯০ শতাংশকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত ২৫ আগস্টের পর ওই অঞ্চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযান জোরদার করলে ছয় লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন রাখাইনের তিনটি শহরে অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা মাত্র ৭৯ হাজার ৩৮ জন। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এবং সরকারি ও আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বার্তা সংস্থা ইকনা: গ্রামে অগ্নিসংযোগে পুড়ে চলা ঘরবাড়ি রেখে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসে বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বের করার জন্য ইরাবতি রাখাইনের তিনটি শহরের সরকারি রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে। এ রিপোর্ট তৈরি করেছে রাখাইনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিপার্টমেন্ট (জিএডি)। এটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।
জিএডির রিপোর্ট অনুযায়ী, আক্রান্ত এলাকাগুলো থেকে যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসেননি তাদের সংখ্যা ৭৯ হাজারের মতো। বাকি প্রায় সাত লাখ ৬৭ হাজারকেই জোর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
জিএডির রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রাথিডংয়ের ৬ শতাংশ, বুথিডংয়ের ৮৪ শতাংশ ও মংডুর ৯৩ শতাংশ জনসংখ্যাই ছিল রোহিঙ্গা। এতে অবশ্য তাদের ‘রোহিঙ্গা’ বলে উল্লেখ করা হয়নি। মিয়ানমার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে চলে। এমনকি দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সুচির চাপে জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কফি আনান কমিশনও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বা ‘বাঙালি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জিএডির রিপোর্টে রোহিঙ্গা বোঝাতে ‘বাংলাদেশী’ লেখা হয়েছে। তবে জিএডির কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, রিপোর্টে ‘বাংলাদেশী’ বলতে রোহিঙ্গাদেরই বোঝানো হয়েছে।
বুথিডংয়ের ৩৩৯টি গ্রামের মধ্যে ১৩৭টিই রোহিঙ্গাদের, যা শহরটির মোট গ্রামের ৫১ শতাংশ। শহরটির এক উচ্চপদস্থ জিএডি কর্মকর্তা বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এখানকার অন্তত ৩০টি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাথিডংয়ে রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা সংখ্যাগুরু। আগস্টের সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে সেখানে ২২টি রোহিঙ্গা গ্রাম ছিল। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সেখানে এখন মাত্র দুই-তিনটি গ্রাম টিকে আছে। বাকিগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে।
৯০ শতাংশ রোহিঙ্গাকে তাদের আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদের পর এখন তাদের প্রত্যাবসনের প্রক্রিয়া চলমান বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে। তবে প্রত্যাবাসন নিয়ে এই তোড়জোড়ের মধ্যেই বাংলাদেশে অবস্থানরত ডক্টর্স উইদাউথ বর্ডার্সের জরুরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সমন্বয়ক কেট নোলার জানিয়েছেন, এখনো প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশে শতাধিক রোহিঙ্গা আসছেন। তিনি বলেন, আগের মতো বিশাল সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের ঢল না নামলেও এখনো প্রতি সপ্তাহেই এ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চলেছেন। তারা রাখাইনে নিজেদের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন না। সেখানে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।

iqna

captcha