IQNA

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা;

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আমাদেরকে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছে

19:25 - March 21, 2021
সংবাদ: 2612499
তেহরান (ইকনা): ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি ফার্সি নববর্ষ ১৪০০ সালের সূচনা তথা নওরোজ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ধরে নিয়ে দেশের দায়িত্বশীলদের কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে কোনো অবস্থায় সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলা যাবে না।

সর্বোচ্চ নেতা তাঁর ভাষণে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে 'ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ' বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যে দেশটি পরমাণু বোমা হামলা চালিয়ে একটি দেশের দুই লাখ ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করতে পারে সে দেশের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ অপ্রত্যাশিত নয়। পার্সটুডে
 
তবে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমাদের যুবসমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন এবং অনেক পণ্য দেশেই তৈরি করে ইরানকে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য ছিল একটি মূল্যবান শিক্ষা। নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদের দু’টি করণীয় রয়েছে। প্রথমত, আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপকারীর কাছে গিয়ে অনুরোধ করতে পারি যে, আপনারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন। তখন সে আমাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী দাবি-দাওয়া চাপিয়ে দেবে। এই পথটি অপমানজনক ও অবমাননাকর।
 
দ্বিতীয় পথ হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে সব অর্থনৈতিক প্রয়োজন দেশের ভেতরেই মেটানোর চেষ্টা করা। ইরানি জনগণ দ্বিতীয় পথ বেছে নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, করোনাভাইরাসের কথা উল্লেখ করা যায়। এই ভাইরাস ইরানে ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মাস্ক পর্যন্ত ছিল না। অথচ এখন আমরা নিজেরা করোনাভাইরাস মোকাবিলার সব পণ্য দেশেই তৈরি করছি। করোনাভাইরাসের টিকা দেশেই তৈরি হয়েছে এবং জনগণ সে টিকা নিচ্ছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে এবং অবমাননাকর পথ বেছে নেয়া যাবে না।
 
পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকার ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি’ ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সে চেয়েছিল ইরান অবমাননাকরভাবে তার কাছে নতিস্বীকার করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরান নতিস্বীকার করেনি বরং সেই ব্যক্তি চরম অপমানিত অবস্থায় বিদায় নিয়েছে। বিদায় নেয়ার আগে সে আমেরিকারও বদনাম করেছে। অন্যদিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান গৌরবের সঙ্গে টিকে রয়েছে।
 
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টও যদি তার পূর্বসুরির পথ অনুসরণ করে তবে সেও একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু ইরান গর্বভরে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে।
 
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরানের চূড়ান্ত নীতি হচ্ছে, পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী পশ্চিমা দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। আর তারা তা করলেই ইরান এই সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে।
 
তিনি আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের মতো একটি কসাই সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া আমেরিকার চরম ভুল সিদ্ধান্ত। সেইসঙ্গে সিরিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতিকেও তিনি ওয়াশিংটনের ভুল সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন।
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, কিছু আরব দেশ সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে গোটা মুসলিম উম্মাহর অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হবে না। মুসলিম উম্মাহ ইহুদিবাদী ইসরাইলের হাতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জবরদখলের দুঃসহ স্মৃতি কখনোই ভুলে যাবে না।
 
ইয়েমেন সংকটের জন্যও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আমেরিকাকে দায়ী করে বলেন, মার্কিন সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও সবুজ সংকেত নিয়ে সৌদি আরব এই দারিদ্রপীড়িত দেশটির ওপর আগ্রাসন শুরু করেছে। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণা করার আগে ইয়েমেনে আগ্রাসন বন্ধ করুন।
 
 
সর্বোচ্চ নেতা তাঁর ভাষণে নতুন ফার্সি বছরের নাম দেন ‘উৎপাদন, পৃষ্ঠপোষকতা ও বাধা অপসারণের বছর'। বিগত ফার্সি বছরের নাম ছিল ‘উৎপাদন বৃদ্ধির বছর।' ওই নামের প্রতি সম্মান রেখে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বহু পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এ বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করা বা কমিয়ে দেয়া এবং মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণির প্রভাব কমানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মধ্যসত্ত্বভোগীরা পণ্য উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। সর্বোচ্চ নেতা বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরারও আহ্বান জানিয়েছেন।
 
তিনি একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শত্রুর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ সত্ত্বেও ইরানের অর্থনীতি বিশ্বে ১৮তম অবস্থানে রয়েছে। এটি ছোটখাট কোনো ব্যাপার নয়। বিশ্বের দুইশ’র বেশি দেশের মধ্যে ১৮তম অবস্থানে থাকা অনেক বড় ব্যাপার। ইরানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ থেকে কিছু প্রতিবন্ধকতা তুলে নেয়া সম্ভব হলে এদেশ ১২তম অবস্থানে যেতে পারবে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
 
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, দেশের ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করে এসব প্রতিবন্ধকতা এমনভাবে দূর করতে হবে যাতে নিষেধাজ্ঞা ইরানের অর্থনীতির কোনো ক্ষতি করতে না পারে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ভালো; কিন্তু যদি না ওঠে তাহলেও যাতে অর্থনীতির ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
 
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশের অর্থনীতিকে নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভরশীল না করার জন্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনাদেরকে ধরে নিতে হবে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। ‘নিষেধাজ্ঞা যদি উঠে যায় তাহলে এটা করব, ওটা করব’ এ ধরনের কথা বলবেন না। যদি'র ওপর ভিত্তি করে দেয়া নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
 
সর্বোচ্চ নেতা আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে জনগণকে এ নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ইরানের জনগণকে নিজেদের মধ্যকার ঐক্য ও সংহতির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আগামী জুন মাসে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। iqna
captcha