IQNA

কোরআন হাদিসে আল-আকসা

0:04 - October 17, 2023
সংবাদ: 3474514
ফিলিস্তিন (ইকনা): প্রতিটি ধর্মে কিছু পবিত্র বিষয় ও স্থান আছে, যেগুলোকে তার অনুসারীরা সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখে। আর তা রক্ষা করাকে নিজের দায়িত্ব মনে করে। ইসলাম ধর্মেও এমন কিছু পবিত্র স্থান রয়েছে, যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং সম্মান রক্ষাকে মুসলমানরা তাদের ঈমানি দায়িত্ব মনে করে। মসজিদুল আকসা সেগুলোর একটি।
প্রতিটি ধর্মে কিছু পবিত্র বিষয় ও স্থান আছে, যেগুলোকে তার অনুসারীরা সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখে। আর তা রক্ষা করাকে নিজের দায়িত্ব মনে করে। ইসলাম ধর্মেও এমন কিছু পবিত্র স্থান রয়েছে, যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং সম্মান রক্ষাকে মুসলমানরা তাদের ঈমানি দায়িত্ব মনে করে। মসজিদুল আকসা সেগুলোর একটি।
 
পবিত্র মক্কা ও মদিনার পর মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান।
 
 
কোরআনে আল-আকসার বৈশিষ্ট্য
 
পবিত্র কোরআনে আল-আকসা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে—
 
১. পবিত্র ভূমি : আল্লাহ মসজিদুল আকসা ও তার আশপাশের অঞ্চলকে পবিত্র ভূমি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তাতে তোমরা প্রবেশ করো এবং পশ্চাদপসরণ কোরো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২১)
 
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আয়াতে পবিত্র ভূমি দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাস উদ্দেশ্য।
 
সেখানে বনি ইসরাইলকে প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
২. বরকতময় ভূমি : মহান আল্লাহ মসজিদুল আকসাসহ সমগ্র ফিলিস্তিন ভূমিকে বরকতময় করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হতো তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি।’
 
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩৭)
 
৩. মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিধন্য ভূমি : ইসরা ও মিরাজের রাতে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মসজিদুল আকসা পরিভ্রমণ করান।
 
ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১)
৪. মুক্তিকামীদের ভূমি : আল্লাহ যুগে যুগে মুক্তিকামী মানুষকে ফিলিস্তিন ভূমিতে আশ্রয় দিয়েছেন। যেমন—লুত (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এবং আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই দেশে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’
 
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৭১)
 
৫. কল্যাণময় রাজ্য ও রাজত্বের ভূমি : আল্লাহ ফিলিস্তিন ভূমিকে কল্যাণময় করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সুলাইমানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; তা তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।
 
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮১)
 
৬. মধ্যবর্তী ভূমি : প্রাচীন শামের সঙ্গে আরবরা যে পথগুলো ব্যবহার করত তার মধ্যভাগে ছিল ফিলিস্তিন ভূমি, যাকে আল্লাহ ভ্রমণকারীদের জন্য নিরাপদ করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং সেসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ কোরো দিনে ও রাতে।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৮)
 
৭. জলপাই ও ডুমুরের ভূমি : আল্লাহ সুরা ত্বিনে জলপাই, ডুমুর ও সিনাই উপত্যকার শপথ করেছেন, যা স্পষ্টতই ফিলিস্তিন ভূমিকে বোঝায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ ত্বিন (জলপাই) ও জাইতুনের (ডুমুরের), শপথ সিনাই পর্বতের।’ (সুরা : ত্বিন, আয়াত : ১-২)
 
 
 
হাদিসে আল-আকসার বৈশিষ্ট্য
 
পবিত্র কোরআনের মতো হাদিসেও আল-আকসার মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর কয়েকটি হলো—
 
১. দাজ্জাল থেকে নিরাপদ : আল্লাহ তাআলা মসজিদুল আকসাকে দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা করবেন। হাদিসে এসেছে, ‘দাজ্জাল পৃথিবীতে ৪০ দিন অবস্থান করবে। তার রাজত্ব সর্বত্র বিস্তার লাভ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩১৩৯)
 
 
২. সত্যের পথে সংগ্রামের ভূমি : আল্লাহ ফিলিস্তিন ভূমিকে সত্যের পথে সংগ্রামের দৃষ্টান্ত বানিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল দামেস্কের প্রবেশপথগুলোতে এবং তার আশপাশে সংগ্রাম করতে এবং বায়তুল মুকাদ্দাস ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সর্বদা (সত্যের পক্ষে) সংগ্রামরত থাকবে। কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের শত্রুরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (মুসান্নাফে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৬৪১৭)
 
৩. কিয়ামতের আলামত : আল্লাহ বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিয়ামতের আলামত বানিয়েছেন। আউফ বিন মালিক (রা.) বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি তখন একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো—১. আমার মৃত্যু, ২. বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, ৩. তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির পালের মতো মহামারি, ৪. সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে ১০০ দিনার দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে, ৫. এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে, ৬. যুদ্ধবিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রত্যেক পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৭৬)
 
আল্লাহ মুসলিম জাতিকে মসজিদুল আকসার সম্মান রক্ষা করার তাওফিক দিন। 
 
captcha